জুলোজী ডিপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। একটি মেয়েকে দেখলাম ঝগড়া করতে।বাহ্,খুব জটিল ঝগড়া করতে জানে।ঝগড়ার কতগুলো ধারাভাষ্য শিখে নিলাম। আমি প্রনয়,ডিইউ-র ফিজিক্সের ৩য় বর্ষের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই ঝগড়ার প্রতি আমার অদম্য আকর্ষণ।একদম চুম্বকের বিপরীত মেরুর মত।কবির ভাষায় বললে হবে,"যেখানেই ঝগড়া দেখিতে পাই,সেইখানেই চলিয়া যাই।কেউ আটকাইতে চাহিয়াও পারেনা (আটকানোর চেষ্টা করলেতো পারবে)"।আসলে আমার ঝগড়া দেখতে মজা লাগে অনেক।কিন্তু আফসোসের বিষয় আজ অবধি ঝগড়া শিখতে পারলাম না।জুলোজী ডিপার্টমেন্টেরসামনে দাঁড়িয়ে হাসছিলাম আর ঝগড়া দেখছিলাম।হঠাৎ একটা কাউয়া মার্কা গলার (খুব চিকন কণ্ঠ) শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো..
মেয়েঃএখানে
দাঁড়িয়ে বিড়ালের মত হাসছেন কেনো?
আমিঃকারণটা বলছি একটু পর।আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন।মেয়েঃ কি প্রশ্ন?
আমিঃ বিড়ালের হাসি আপনি বুঝলেন কিভাবে?
আপনি কি সমপ্রজাতির ই?
মেয়েঃ বিড়ালের মুখের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখবেন,মুখটা সবসময় ই হাসি হাসি দেখা যায়।
আমিঃ ঠিক বলেছেন,হাসিটা দেখতে অবিকল আপনার হাসির মত।
মেয়েঃ আপনার চোখে ছানি পরেছে। তারাতারি ভালো ডাক্তার দেখিয়ে অপারেশন করান। বলেই মেয়েটি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল। আমিও হাসতে হাসতে চলে গেলাম। কিছুদিন পর আবার মেয়েটিকে ঝগড়া করতে দেখলাম।এইবার জায়গার পরিবর্তন হয়েছে,কার্জন হলের গেইটের সামনে ঝগড়া করছিল। আশ্চর্য হলাম,এই মেয়ে কি সারাদিন রাস্তাঘাটে ঝগড়া ই করে নাকি!!!কৌতূহল নিয়েসামনে এগোলাম,উদ্দেশ্য ঝগড়া দেখা নয়।উদ্দেশ্য হচ্ছে জানা যে মেয়েটি সারাদিন ই ঝগড়া করে নাকি!!!
আমিঃ আপনি কি সারাদিন ই ঝগড়া করেন নাকি? (ডাইনী দৃষ্টিতে এমনভাবে তাকালো যেনো আমাকে এখনি খেয়ে ফেলবে)
মেয়েঃ আমি সারাদিন ঝগড়া করব নাকি নাচানাচি করব তা কি আপনাকে বলে করতে হবে আমার?
আমিঃ সবসময় কি ঝগড়া করার মুডেই থাকেন নাকি?
মেয়েঃ আপনার সমস্যা কি?
আমিঃ আমার সমস্যা কিছুই না!! আপনার সমস্যা জানতে এসেছিলাম।
মেয়েঃ মেয়েদেরকে বেশি গভীরভাবে জানতে যাবেননা।হয়তো ঘৃণা জন্মাবে,আর তা না হলে প্রেমে পরে যাবেন।
আমিঃ খাইছে আমারে।ক্লাস নাইন থেকে ফিজিক্স পড়ছি,ফিজিক্সকে জানছি.. এখন অনার্স ৩য় বর্ষে। সাত বছরের দীর্ঘ সময়েই না ফিজিক্সকে ঘৃণা করতে পেরেছি নাকি প্রেমে পরেছি।আর একটা ঝগড়াটে মেয়ের প্রেমে পরাতো দূরেই থাকুক!!! (কিছু না বলেই ঝগড়াটে মেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে স্থান পরিত্যাগ করল। আমি সিউর লজ্জাপেয়েছে,রাস্তার মধ্যে অপমান,ছোট কিছু নয়। এই মেয়েদের একটাই সমস্যা,সুন্দর বললে দোষ,পঁচা বললে দোষ,কিছু না বললেও দোষ।তেমনি ভালো বললেও দোষ আবার খারাপ বললেও দোষ) আমিও আমার কাজে চলে গেলাম। কথায় আছেনা,“অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা"। কথাটা ৫০০% সত্যি।সারাদিন কাজের ব্যস্ততার মধ্যে থাকায় মাথায় ওসব আলতু ফালতু চিন্তা আসেনি।যেইনা রাতে ফ্রি হলাম আর আলোর বেগে ফালতু চিন্তাটা মাথায় ঢুকে গেল।আসলেই রাত্রি বাড়ার সাথে সাথে আবেগগুলো সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পায়।আমি ঐ ঝগড়াটে মেয়েটিকে নিয়ে কেন ভাবছি!!কেন বারবার মনে হচ্ছে ওর ঝগড়া করার পেছনেও কোনো কারণআছে।শুধুশুধুতো একটা মেয়ে পায়েপাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে যাবেনা।এসব কিছু ভাবছি কারণ মেয়েটিকে আমি খোঁচা দিয়ে বারবার কথা বলার পরেও আমাকে কিছুই বললোনা।স্ট্যাঞ্জ!!! ঝগড়াটে হলে আমার সাথেও তো ঝগড়া করতে পারতো।আসলে কি আবেগের জন্য মেয়েটিকে ইন্যেসেন্ট মনে হচ্ছে নাকি মেয়েটি সত্যি সত্যিই নির্দোষ!!!ধ্যাত..আমি এসব ভেবে সময় কেন নষ্ট করছি।ঘুমা প্রনয়! সকালে তোর ক্লাস আছে।শুভ রাত্রি,আল্লাহ হাফেজ প্রনয়। পরদিন ক্লাসে গেলাম।তারপরের কয়েকদিন আমার মতই চলছিলাম।মেয়েটিকে দেখা হয়ে উঠেনি।মাঝে
মাঝে ভাবনায় আসতো মেয়েটি।দুচোখ ভার্সিটিতে চুপচাপ খুঁজে বেড়াতো মেয়েটিকে,কেনো খুঁজতো তা জানা নেই। আজ অন্যরকম কিছু দেখলাম যা দেখার আশা আমার চোখ কখনো করেছিল কিনা জানিনা!সেই ঝগড়াটে মেয়েটিকেই দেখলাম, কিন্তু আজ অন্যরূপে। মেয়েটি আজ ঝগড়া করছিল না,মেয়েটি আজ একটা ছোট পথশিশুকে আদর করছিল,কিছু খাবারও কিনে দিল শিশুটিকে।ভালো লাগলো অনেক।আসলেই মেয়েটির এই চেহারা দেখে আমি আশ্চর্য।কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো আবার ভয়ও হচ্ছিলো কারণ সবসময়ই মেয়েটিকে খোঁচা দিয়ে কথা বলেছি।ইচ্ছে হচ্ছিলো কাছে গিয়ে কয়েকটা কথা বলি কিন্তু সাহস স্যার আমায় সাপোর্ট করলোনা।তাই বাধ্য হয়েই স্থান পরিত্যাগ করলাম। আশ্চর্য বিষয় আজ আমি সারাটিদিন মেয়েটিকে নিয়েই ভাবলাম।আর গাধার মত চলে আসা নিয়ে আফসোস করলাম।উচিত হয়নি ঐরকম লেজ গুটিয়ে কুকুরের মত পালিয়ে আসা।আমার মনে রাখা উচিত ছিল যে আমাদের জাতীয় পশু টাইগার,তো আমার সাহস হতে হবে বাঘের মতই। পরেরবার আর মিস করা যাবেনা।এরকম সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমালাম বলতে পারবোনা।
.ঐতো মেয়েটি,যাই সাহস করে গিয়ে কথা বলি।
আমিঃ ওহে বালিকা,শুনছেন?
মেয়েঃ আপনি?
আমিঃ চোখ এত বড় করেছেন কেন?মনেতো হচ্ছে চোখ বেরিয়ে যাবে গর্ত থেকে।আপনি ভয় না দেখালেও আমি ভয় পাচ্ছি। প্লিজ,একটু স্বাভাবিক হন।
মেয়েঃ আপনি পেয়েছেনটা কি?আপনার সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা?
আমিঃ আপনি কি মুসলমান?
মেয়েঃ অবশ্যই
আমিঃ ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,আমাদের জন্ম একবারই হয়,তার মানে আমাদের জীবন একটাই। যদি শত্রুতা হয় তাহলে এক জন্মেই হবে।আর কিছু কথা বলার আগেই একটা ঠাস শব্দ শুনে লাফিয়ে উঠলাম।ইস্ পুরো ঘেমে গিয়েছি।ওহ বাঁচা গেল,আমি বিছানাতে।আলহামদুলিল্লাহ,থাপ্পরটা স্বপ্নে দিয়েছিল,বাস্তবে দিলে হয়তো গালটাই পঁচে যেত। ঘড়ির দিকে তাকালাম, সাড়ে নয়টা বেজে গিয়েছে। ক্লাস ১১টায়। তাড়াহুড়ো করে ভার্সিটির জন্য বের হলাম। ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছিলাম।প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাশ দিয়ে যাবার সময় মেয়েটিকে চোখে পড়ল।এই প্রথমবার খুব ভালো করে দেখলাম মেয়েটিকে।চাশমিশ মেয়েগুলা আসলেই খুব মিষ্টি হয়। কিন্তু এই মিষ্টি মেয়ে এত ঝগড়াটে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরতো আর আমি দিতে পারবোনা,মেয়েটির কাছ থেকেই জানতে হবে। যাই,কথা বলে আসি। সাহস করে সামনে এগুলাম।
আমিঃ একটু বসতে পারি?
মেয়েঃ (চুপচাপ জায়গা করে দিল)
আমিঃ আরে আমিতো পুরাই টাস্কিত।এই মেয়েতো কোনো রিঅ্যাকশন ই করলোনা।বাহ্,ভালোতো।
আমিঃ আপনি কি এই ভার্সিটির?
মেয়েঃ না ভাইয়া,আমি সবে মাত্র প্রাইমারী লেভেল শেষ করে হাই স্কুলে উঠেছি।
আমিঃ তাই?তাহলেতো আমরা ক্লাসমেইট।আমিও সবেমাত্র প্রাইমারী স্কুলের লেখাপড়া শেষ করেছি।প্রাইমারী শেষ করেছি,এখন আমি ক্লাস সিক্সে!রুখবে আমায় কে???
মেয়েঃ হিহিহিহিহি
আমিঃ বাহ্!আপনিতো হাসতেও জানেন?
মেয়েঃ তো আপনার কি মনে হয়েছে আমি শুধু ঝগড়াই করতে জানি?
আমিঃ না মানে ইয়ে,এই মানে হচ্ছে আর কি!
মেয়েঃ আমতা আমতা করা বন্ধ করুন।কিছু বলতে হবেনা।
আমিঃ জ্বি!ধন্যবাদ।
মেয়েঃ হুম।আমি আনিসা,আপনি?
আমিঃ আমি প্রনয়।ফিজিক্সে,৩য় বর্ষ।আপনি?
আনিসাঃ আমি জুলোজীতে,২য় বর্ষে আছি। ডিইউতেই?
প্রনয়ঃ হুম।আপনি?
আনিসাঃ হুম,আমিও।আচ্ছা আজ আসি,বাসায় যেতে হবে।আল্লাহ হাফেজ।
প্রনয়ঃ আল্লাহ হাফেজ।
স্বপ্নের সব জিনিস সত্যি না হলেও একটাতো মিললো।মেয়েটি আসলেই মুসলমান।হিজাবী নাতো,তাই বুঝতে কষ্ট হয়েছিল।যাক ভালো,থাপ্পর খেতে হয়নি।খুশি মনেই বাড়ি ফিরলাম। বাসায় আসার পরপরই মনে হল আনিসার সাথে যে
কারণে কথা বলতে গিয়েছি তাইতো জানা হলোনা।কেন যে এত ভুলাক্কার তুই প্রনয়!!!! নেক্সট টাইম দেখা হলে জেনে নিস কিন্তু!! তারপরের ৪-৫দিন জুলোজী ডিপার্টমেন্টের আশেপাশে অনেক ঘুরঘুর করেছি মেয়েটির খোঁজে।কিন্তু মেয়েটিকে পেলামনা।প্রতিদিনই মনে হত পেয়ে যাব বাট যখন দেখা হয়না তখন খুব কষ্ট লাগে।মেয়েটি কি সত্যি বলেছিল?ও কি আসলেই এই ভার্সিটিরই? তারপরের কয়েকটা দিনও চলে গেলো।কোনো খবর পেলাম না।আমার বন্ধুরা কেউ চিনেওনা
মেয়েটিকে যে খোঁজখবর বলতে পারবে।
.
প্রায় দুই সপ্তাহ পর মেয়েটিকে দেখলাম ক্লাসরুমে ঢুকতে।নাহ,মেয়েটি মিথ্যা বলেনি।ও এই ভার্সিটির এই ডিপার্টমেন্টের ই।মাঝ দিয়ে খোঁজ পেয়েছিলাম ওর সম্পর্কে। যাই কথা বলে আসি।
প্রনয়ঃ আনিসা,শুনুন!
আনিসাঃ জ্বি,বলুন
প্রনয়ঃ এতদিন কোথায় ছিলেন?ভার্সিটিতে আসেননি কেনো?
আনিসাঃ সমস্যা ছিলো তাই আসিনি।
প্রনয়ঃ কি সমস্যা জানতে পারি?
আনিসাঃ না,পারেননা।
প্রনয়ঃ আচ্ছা।
বলে চলে আসলাম।কেন জানি মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল।এমনিতেতো আমি মেয়ের কেউনা,তবুও কেন এত খারাপ লাগছে কে জানে।হয়তোবা লজ্জায় ই এতটা খারাপ লাগছে কারণ একটা মেয়ে মুখের উপর মানা করে দিয়েছে। রাতে ঠিকমত ঘুম হলোনা।খুব খারাপ লাগছিলো।মন চাইছিল মেয়েটির কাছ থেকে জোর করে কারণ জানতে কিন্তু সেই জোর করার মত অধিকার আমার নেই। আচ্ছা কেনো সৃষ্টিকর্তা আমাকে অধিকারটা দিলেননা?আমি কি এই অধিকারের যোগ্য ছিলামনা!!
মনটা খুব খারাপ লাগছে।কারণটা শুধু এই নয় যে ও মুখের উপর মানা করে দিয়েছে,ওর মুখটা মলিন ছিল তাতেও খারাপ লাগছে। নিজেকে বুঝালাম অনেকক্ষণ।কিছুই করার নেই,এটাই নিয়তি।আলহামদুলিল্লাহ। হাল ছাড়া যাবেনা।জানতেই হবে কি সমস্যা…!
পরদিন ভার্সিটিতে গেলাম।ওর ডিপার্টমেন্টের সামনেই ঘুরঘুর করতে লাগলাম।ওর সময়মত ও চলে আসল।
কাছে গিয়ে ডাকলাম-
আমিঃ আনিসা?
আনিসাঃ হুম,বলুন।
আমিঃ কথা বলার সুযোগ হবে?
আনিসাঃ হুম ,হবে।
আমিঃ রাগ করবেন নাতো?
আনিসাঃ নাহ
আমিঃ তাহলে বকা দিবেন?
আনিসাঃ আপনি কি বলবেন?নাকি এরকম ই করবেন?
আমিঃ না না,বলবতো।
আনিসাঃ তো তারাতারি বলে ফেলুন,আমার ক্লাস আছে।
আমিঃ আপনি এরকম করছেন কেন?আমিতো সব ভুলে যাচ্ছি।
আনিসাঃ আচ্ছা বলুন।আমি মুখে তালা দিলাম। কিছু বলবোনা।
আমিঃ উত্তর দিবেনতো?
আনিসাঃ আমি চললাম।
আমিঃএ ই যাবেননা,বলছিতো।
আনিসাঃ হুম,বলুন।
আমিঃ আচ্ছা মাঝ দিয়ে চার-পাঁচদিন উধাও ছিলেন কেন?জানতে পারি?
আনিসাঃ আপনি জানলেন কীভাবে?
আমিঃ খোঁজ নিয়েছিলাম।
আনিসাঃ এমনিই আসিনি,ভালো লাগেনি,তাই।
আমিঃ মনটা খারাপ কেন জানতে পারি?
আনিসাঃ কেন বলব?আপনি কে?
আমিঃ আমি একজন ম্যাংগো পিপল।
আনিসাঃ মানে?
আমিঃ আমজনতা,আর আমাকে আপনার বন্ধু ভেবে বলতে পার।
আনিসাঃ বন্ধু!কবে থেকে?
আমিঃ ঝগড়া দেখা থেকে।এই আপনি ঝগড়া করতেন কেন?
আনিসাঃ অনুচিত কোনো কিছু মনে হলেই ঝগড়া করতাম।আমার ক্লাস শুরু হয়ে যাচ্ছে।আসি,আল্লাহ হাফেজ।
আমিঃ ঐ মেয়ে!উত্তরতো দিলেননা,যান কই!কিছু না বলেই চলে যাচ্ছেন।ক্লাস শেষ হবার পর এখানেই থাকবেন,ওয়েট করব!(জোরেই বললাম,ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাবে মনে হচ্ছে)
.
ক্লাস শেষ হবার পর ওকে খুঁজতে লাগলাম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও পেলাম না।পরে জানতে পেলাম ওদের ক্লাস আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে।কি আর করার !মন খারাপ করে চলে আসলাম আগামী দিনের আশায়!
.
পরদিনঃ একই টাইমে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আসতে দেখলাম ওকে।ডাকলাম-
আমিঃ আনিসা?
আনিসাঃ ডাকবেননা আমাকে।
আমিঃ কি করলাম?
আনিসাঃ কি করেছেন জানেননা?
আমিঃ জানলেকি জিজ্ঞাসা করতাম?
আনিসাঃ দাঁড়িয়ে থাকতে বলে আসেননি!
আমিঃ আপনার ক্লাস কয়টায় শেষ?
আনিসাঃ ১২ টা ৩০
আমিঃ ওহ,এইজন্যই।আমার ক্লাসতো শেষ হয় ১টার
পর
আনিসাঃ হুম,ভালোইতো
অামিঃ একটু কথা বলা যাবে?
আনিসাঃ আরে ,আমি বলতে চাইছিনা বুঝেননা কেন?গাঁয়ে পড়ে এরকম ভাললাগেনা
আমিঃ যা-ই ভাবেননা কেন,একটু কথা বলব! জাস্ট কৌতূহল আর কি!
আনিসাঃ কিসের কৌতূহল?
আমিঃ আপনি এমন কেন তা নিয়ে!!!
আনিসাঃ ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা হয়েছি
আমিঃ তো কি দিয়ে খেলেন?ইস্ত্রী নাকি লোহা?
আনিসাঃ দুষ্টুমির মুডে নেই আমি।বাসায় যেতে হবে। তাড়া আছে।
আমিঃ কেন?
আনিসাঃ আমার বাবা অসুস্থ,তাই।আর এতদিন আসিনি কারণ বাবা অসুস্থ ছিল।হাসপাতালে ছিলাম বাবার সাথে।
আমিঃ ও!তাই বলেন..আমিতো কত্ত আকাশ কুসুম চিন্তা করে ফেলেছিলাম।
আনিসাঃ কি!!!(অবাক হয়ে)আপনি কি উল্টাপাল্টা ভেবেছেন আমাকে নিয়ে?
আমিঃ ঐ ঝগড়াটে মেয়ে!!সবসময় ঝগড়ার মুডে থাকেন কেন!!!আমিতো ভেবেছিলাম আপনার বিয়ের দাওয়াতটাই মিস করে ফোললাম..(একটা ভেংচি কেটে হাসতে হাসতে চলে আসলাম) পেছনে তাকালাম না,কারণ ওকে আমি জানি। দাঁড়িয়ে রাগে গজগজ করছে হয়তো।করুক!এতদিন কষ্ট পেয়েছি,আজ না রাগালে একটু হয় নাকি!!!
.
পরেরদিন রিকশায় থাকা অবস্থায় ওকে দেখলাম পথশিশুকে আদর করে খাবার কিনে দিতে।ওর এই স্বভাবটাকেই আমি পাগলের মত ভালোবেসে ফেলেছি।হয়তোবা এই স্বভাবের মানুষটাকেও তেমনটাই ভালোবাসি। ওর সামনে গেলাম..
আমিঃ হাই ঝগড়াটে মহিলা..
আনিসাঃ আসসালামু আলাইকুম।
আমিঃ (অবাক হয়ে)আপনি রাগ করেননি কেন?
আনিসাঃ তাইতো সালাম দিলাম,যাতে ঝগড়া লাগানোর ইবলিশ শয়তানটা দূরে চলে যায়।আর আপনার কুমতলবে ব্যঘাত ঘটে।সালামের উত্তরটা কিন্তু পেলামনা।
আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।চালাকতো ভালোই হয়েছেন।আপনার আব্বুর শরীর কেমন এখন?
আনিসাঃ আল্লাহর রহমতে আগের চেয়ে ভালো।
আমিঃ সুস্থ হলেই আলহামদুলিল্লাহ।তখন না হয় শুভকাজটা সারা যাবে।জানাবেন অামাকে।
আনিসাঃ মানে কি?
আমিঃ কিছুনা।বাচ্চা মেয়েদের মাথায় এসব ঢুকবেনা।(বলেই চলে আসলাম) আমি জানি বেচারী অসহায়ভাবে চিন্তা করছে। করুক!একটু করুক!!এর মাধ্যমেওতো আমাকে নিয়ে একটু ভাববে।ওর ভাবনায় যাওয়াতো কম কিছুনা।
হাহা।
.
বাসায় সবকিছুই বললাম।কেউ দ্বিমত করলোনা। কারণ বাবা আগে থেকেই আমার বিয়ের কথা বলছিলো।আমার জন্য উনি হজ্জ করতে যেতে পারছেনা।হজ্জ করতে যাবার আগে নাকি সাবালক ছেলে/ মেয়েকে বিবাহ দিয়ে যেতে হয় (বাবার মাথায় এসব রে ঢুকিয়েছে কে জানে)।তো এতদিন আমার কানের সামনে দিনরাত যিকির পারতো।তখন আমি রাজি ছিলামনা।বাট এখনতো রাজি।পাত্রীও আমার পছন্দের ই।এখন ও রাজি হলেই সব ভেজাল শেষ।
.
আনিসার বাসার ঠিকানা জোগাড় করলাম বহু কষ্টে।বলতেই চাচ্ছিলোনা ফাজিলটা। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমরা গেলাম।তারপর যা শুনলাম তাতে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। আনিসা ডিভোর্সি।আর ওর ডিভোর্সের কারণেই ওর বাবা মাইনর স্ট্রোক করেছিল ।বাবা মা এসব জানার পর আমার সাথে রাগ করে ওদের বাসা থেকে বের হয়ে গেল।ও ডিভোর্সি ই হোক,আর ২ বাচ্চার মা ই হোক না কেন আমার কোনো সমস্যা ই ছিলোনা।আমি সব মেনে নিতে পারব।শুধু ওরেই লাগবে আমার।আনিসার বাবার সাথে কথা বলে বুঝলাম যে অামি আনিসাকে বিয়ে করলে ওনার কোনো প্রবলেম নেই।একদিক দিয়ে শান্তি পেয়ে বের হলাম ওদের বাসা থেকে।এখন আমার বাবা আর মাকে রাজি করাতে হবে।কাজটা মোটেও সহজ না।
.
ভয় নিয়ে বাসায় ঢুকলাম।
বাবাঃ প্রনয়!
আমিঃ জ্বি বাবা
বাবাঃএ সব কি ছিল!তুইতো আমার সম্মান ডুবানোর জন্য উঠে পড়ে লেগে আছিস একদম!
আমিঃ বাবা এতে দোষের কি আছে?
বাবাঃ দোষের কি আছে মানে?তুই একবার ভেবে দেখেছিস সমাজে আমাদের সম্মান কোথায় নামবে?
আমিঃ বাবা এতে ওর দোষ কি?একটা কথা বলি?
বাবাঃ বলার আর বাকি ই বা কি রাখলি।শেষ করে শান্তি পেয়ে নে
আমিঃ বাবা এইরকমটা যদি তোমাদের মেয়ে আর আমার বোন প্রান্তির সাথে ঘটতো?তখন কি তুমি এইরকম ই করতে?কোনো অবিবাহিত ছেলে ওকে বিয়ে করতে আসলে তাকে ফিরিয়ে দিতে?নাকি প্রান্তিকে আর বিয়েই দিতেনা?
.
এইটুকু বলে চলে আসলাম।পেছনে ফিরে তাকানোর সাহস আর শক্তি কোনোটাই আমার মাঝে নেই। কারণ বাবার চোখের জল আমি সহ্য পারবোনা…
পরদিন সকালের কাহিনীঃ
বাবাঃ প্রনয় আসব?
আমিঃ আসো বাবা।কিছু বলবে কি?
বাবাঃ ভাবছিলাম কি………..
আমিঃ কি বাবা?
বাবাঃ ভাবছিলাম ১ সপ্তাহের মধ্যে তোর বিয়েটা সেরেই ফেলব যদি আনিসার বাবা মার দ্বিমত না থাকে।
আমিঃ (খুশিতে মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছিলোনা।দু তিন ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল)
বাবাঃবোকা ছেলে,ছেলেদের কাঁদতে নেই।চোখের পানি জমিয়ে রাখ।বিয়ের পর কাজে লাগবে। কথাগুলা বলতে বলতে বাবা ঘর থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল।
.
আমার মন থেকে সব বোঝা হালকা হয়ে গেল। কল্পনার জগতে চলে গেলাম।আনিসার হাত ধরে মুদ্রের পাড়ে রাতের অন্ধকারে বসে আছি। অপেক্ষায় আছি সেইদিনের,তীব্রভাবে অপেক্ষায় আছি আমি সেইদিনের……।
No comments:
Post a Comment